Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বীজ প্রযুক্তি গবেষণার বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ করণীয়

বীজ প্রযুক্তি গবেষণার বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ করণীয়
ড. মোঃ আবু হেনা ছরোয়ার জাহান১ ড. পরিমল চন্দ্র সরকার২ মো. আরাফাত হোসেন৩
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিই এদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। ফসল উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হলো মানসম্পন্ন বীজ। দেশে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা মিলে শতকরা ৩০ ভাগ মানসস্পন্ন বীজ সরবরাহ করছে। এর মধ্যে ধানে শতকরা ৪২ ভাগ, ভুট্টায় শতকরা ৫৬ ভাগ, পাটে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ, ডালে শতকরা ১২ ভাগ, তৈলবীজে শতকরা ১৫ ভাগ, সবজিতে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ এবং আলুতে শতকরা ১৬ ভাগ বীজ সরবরাহ করতে পারে (উৎস: কৃষি মন্ত্রণালয় ২০২১-২০২২)। বাকি বীজ কৃষকের। নিজে রাখে এবং বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশের চাহিদা পূরণ করে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৮২ মেট্রিক টন প্রজনন ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। ফসল উৎপাদন আর সেই ফসলের বীজ উৎপাদন সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে থাকে। কৃষি পরিবেশ, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, জীবনকাল প্রভৃতি কারনে এই ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এজন্য বীজ উৎপাদনের জন্য বপন/রোপণ দূরত্ব, সার, সেচ ও বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে থাকে। এজন্য বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি ফসল উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি থেকে ভিন্নতর। তাছাড়া এক মৌসুমে উৎপাদিত বীজ পরবর্তী মৌসুমে বা পরবর্তী বৎসরে ব্যবহার করতে হয় বিধায় অনেকসময় বীজ একটা দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করতে হয়। তাই মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে বীজ প্রযুক্তি বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
বীজ প্রযুক্তি
বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, পরীক্ষণ, মাননিয়ন্ত্রণ, বাজারজাতকরণ ও বিতরণ এবং বীজ উন্নয়নের সামগ্রিক বিষয়সমূহ বীজ প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন প্রযুক্তিসমূহ নিম্নরূপ-
মুগডালের বীজ উৎপাদন : সমন্বিত আগাছা দমনের মাধ্যমে মুগডালের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করতে হবে। জমি চাষের এক সপ্তাহ পূর্বে আগাছানাশক গ¬াইফোসেট প্রতি লিটার পানিতে ৭.৫ মিলিলিটার হারে ৫ শতক জমির জন্য ১০ লিটার মিশ্রণ প্রয়োগ করে পরবর্তীতে চারা গজানোর ২০ দিন পর একবার নিড়ানি দ্বারা আগাছা পরিষ্কার করলে ১.৫৭ টন/হেক্টর মানসম্পন্ন (শতকরা ৮০ ভাগের অধিক গজানো ক্ষমতাসম্পন্ন) মুগডালের বীজ পাওয়া যায়। আগাছানাশক গ¬াইফোসেট সব ধরনের আগাছা দমনের জন্য কার্যকরী। এই প্রযুক্তিতে মোট লাভ (এৎড়ংং গধৎমরহ) ১,৩৪,৮৫০ টাকা/হেক্টর এবং প্রতি এককে পরিবর্তনশীল ব্যয় (ঠধৎরধনষব পড়ংঃ) যদি ৫ টাকা বাড়ানো হয় তবে আয় বাড়বে ৩২ টাকা। প্রান্তিক আয়-ব্যয়ের অনুপাত (গধৎমরহধষ ইবহবভরঃ ঈড়ংঃ জধঃরড় (গইঈজ) ৬.৪ঃ১।
টমেটোর বীজ উৎপাদন : টমেটোর থোকা, টমেটো ফলের পরিপক্বতা ও ফল সংগ্রহোত্তর পরিপক্বতার সঠিক সময় নির্ধারণের মাধ্যমে মানসম্পন্ন টমেটো বীজ উৎপাদন করতে হবে। টমেটো থোকায় থোকায় গাছের গোড়া থেকে উপর দিক পর্যন্ত অবিরত ধরতে থাকে আবার একই থোকায় অনেকগুলো টমেটো ফল ধরে থাকে। তাই বীজের পরিপক্বতা বিভিন্ন থোকাতে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বীজের জন্য গাছের নিচ থেকে টমেটো ফলের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ থোকা থেকে অর্ধ-পরিপক্ব (ফলের চার ভাগের তিন ভাগ রঙিন) ফল বীজের জন্য নির্বাচন করতে হবে। কেননা এ ফল থেকে প্রাপ্ত বীজের মান অধিকতর ভালো হয়ে থাকে। তাছাড়া পরিপক্বতার অবস্থা ও সংগ্রহ পরবর্তী সময়ের ভিন্নতার দরুণ বীজের মানের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। অর্ধ-পরিপক্ব ফল সংগ্রহ করে সাথে সাথে তা থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত নয়। ফলকে ০২ (দুই) দিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঘরে রেখে দিয়ে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
করলা বীজ উৎপাদন : ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে বীজের সুপ্ততা ভেঙে এবং বপনের সঠিক সময় নির্ধারণের মাধ্যমে করলার মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা যায়। করলা বীজকে ১% পটাশিয়াম নাইট্রেট অথবা ১% বরিক এসিড অথবা স্বাভাবিক পানিতে ১৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে বীজের সুপ্ততা হ্রাস পায় এবং অংকুরোদগম হার বেড়ে যায়। ফলশ্রুতিতে বীজ হার কম লাগে এবং কৃষকের উৎপাদন খরচ কম পড়ে। মানসম্পন্ন করলা বীজ উৎপাদনের জন্য বর্ষা ঋতুর চেয়ে গ্রীষ্ম ঋতু অধিকতর ভাল। সময়মত বীজ শুকানো না গেলে বীজের মান ভাল হয় না। অক্টোবর মাসের থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত করলা বীজ বপন করে দেখা যায় যে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করলা বীজ বপন করা উত্তম। এই সময়ে বীজ বপন করে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা হলে সবচেয়ে বেশি গজানো হার সম্পন্ন অধিক বীজ পাওয়া যায়। ফলে এদেশের কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
ফ্রেশ কাউমিল্ক (গরুর দুধ) এর মাধ্যমে বীজ প্রাইমিং করে করোলা বীজের অংকুরোদগম বৃদ্ধি করা যায়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফ্রেশ কাউমিল্ক (গাভীর দুধ) ৮০ ভাগ +পানি ২০ ভাগ এর মিশ্রণে বীজ ১৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর বীজ ধুয়ে ১ ঘণ্টা ছায়াযুক্ত স্থানে কক্ষ তাপমাত্রায় শুকানোর পর বপন করতে হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১ মিটার হলে প্রতি হেক্টরে খরচ ৫৭৬ টাকা এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১.৫ মিটার হলে প্রতি হেক্টরে খরচ ৩৮৪ টাকা প্রতি কেজি দুধের মূল্য ৮০ টাকা হারে এ পদ্ধতি বীজ গজানোর সময় ৩-৪ দিন কম লাগে। বীজ গজানোর শতকরা হার স্বাভাবিকের চেয়ে ২৫-৩০ ভাগ বেশি হয় ফলে হেক্টর প্রতি বীজের পরিমাণ কম প্রয়োজন হয়। বীজ গজানোর শতকরা হার ৯৫ ভাগের বেশি হয়ে থাকে।
মরিচের বীজ উৎপাদন : পরিপক্ব ফলের রং, শুকানোর ধরন এবং সঠিক পাত্রে সংরক্ষণের মাধ্যমে মরিচের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। পরাগায়নের ৬০-৭০ দিনের সময় অর্থাৎ গাছের বয়স যখন ১২৫-১৩৫ দিন হয় তখন ফল পরিপক্ব হয়। এই সময় মরিচের ফল হালকা লালচে রঙ ধারন করে। বীজে শুস্ক পদার্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তখন বীজের আর্দ্রতা থাকে ২৯% এবং বীজ গজানোর হার প্রায় ৯৬%। মরিচের ফল বোটাসহ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ শুকানোর পদ্ধতি এবং গুদামে বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতিও বীজের মান নির্ণয়ে বিশেষ ভূমিকা রেখে থাকে। রৌদ্রে (৩২+২ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায়) ৬ দিন (প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে) মরিচ ফল শুকানো ভালো। আবার রৌদ্রে শুকানোর চেয়ে ৪০০ সে. তাপমাত্রায় ৩ দিন (চলমান) ওভেনে শুকানো বীজের মান ভালো হয়ে থাকে। ওভেনে শুকানো বীজের গজানোর হার ৮০% হয়ে থাকে। খোসা সহ বীজ শুকালে তা থেকে খোসা ছাড়ানো বীজের চেয়ে ভালো মানের বীজ পাওয়া যায়। মরিচ ফল শুকানোর পর বায়ুরোধী টিন অথবা প¬াস্টিক পাত্রে অথবা পলিথিন ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে।
চাল কুমড়ার বীজ উৎপাদন : বীজের সুপ্ততা ভাঙা, গাছে ফলের অবস্থান, ফল সংগ্রহের সময় ও সংগ্রহোত্তর পরিপক্বতার সময়, ফলের আকার ও ফলে বীজের অবস্থান নির্ধারণের মাধ্যমে চালকুমড়ার মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা হয়। চালকুমড়া বীজ মাঠে বপনের পূর্বে ০.৪% পটাশিয়াম নাইট্রেট (প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম পটাশিয়াম নাইট্রেট) এ ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর অথবা ডিপ ফ্রিজে (তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সে.) ৪ দিন রেখে দেওয়ার পর বপন করলে বীজ গজানোর হার বৃদ্ধি পায়। চালকুমড়ার ফলের বৃদ্ধি ও ফলের ভিতরের বীজের পরিপক্বতা পৃথকভাবে হয়ে থাকে। তাই বীজের মান ফলের পরিপক্বতা আবার গাছের বিভিন্ন পর্বে ফলের অবস্থানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। লতা ও ফলের বোঁটা শুকালে বীজের জন্য ফল সংগ্রহ করতে হবে। গাছের ৩১ থেকে ৫০ পর্ব পর্যন্ত সংগৃহীত ফলের বীজের মান অধিকতর ভালো হয়ে থাকে। ফলের বোটার দিকের এক-তৃতীয়াংশ (১/৩ ভাগ) অংশের বীজের মান (গজানোর হার ৮১% এর অধিক) ভালো হয়ে থাকে। ফল সংগ্রহের সাথে সাথে বীজের অংকুরোদগম হার কম (৩০% এর নিচে) থাকে এবং কক্ষ তাপমাত্রায় ৫০ দিন পর্যন্ত এই হারের তেমন পরিবর্তন হয় না। তবে ৫০ দিন পর সুপ্ততা ভাঙ্গার কারনে অংকুরোদগম হার ক্রমশ বেড়ে সংরক্ষণের ৭ মাস পর ৮০% এর উপরে হয়ে থাকে।
মিষ্টি মরিচের বীজ উৎপাদন : সঠিক রোপণ সময়, রোপণ দূরত্ব, গাছের ফলের সংখ্যা ও ফল সংগ্রহের সময় নির্ধারণের মাধ্যমে মিষ্টিমরিচের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা যায়। অক্টোবর মাস বীজতলায় মিষ্টি মরিচের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ১ মাস বয়সের চারা নভেম্বর পর্যন্ত রোপণ করা যায়, তবে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চারা রোপণ উত্তম সময়। ১ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট বেডে ১ মাস বয়সী চারা লাগাতে হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪০ সেমি.। প্রতি গাছে ৬-৮টি ফল রাখলে মানসম্পন্ন (৮৫% এর অধিক গজানোর ক্ষমতাসম্পন্ন) বীজ পাওয়া যায়। মিষ্টি মরিচ সম্পূর্ণ লাল রং ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়। পরাগায়নের ৯০ দিনে ফল সংগ্রহ উপযোগী হয়ে থাকে। ফল সংগ্রহের পর ৩-৭ দিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঘরে রেখে দিয়ে বীজ সংগ্রহ করলে বীজের মান ভালো হয়।
গমের বীজ উৎপাদন : রেইজ্ড বেড পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ, বীজ শোধন এবং বপন সঠিক সময় নির্ধারণের মাধ্যমে গমের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে বেড প¬্যান্টার যন্ত্র দিয়ে চাষ করলে জমি চাষের সাথে সাথে বেড তৈরি, সারিতে বীজ বপন ও সার দেয়াসহ মাটি ঢেকে দেয়া সম্ভব হয়। জমির আর্দ্রতা শেষ হওয়ার পূর্বেই দ্রুত চাষ করা সম্ভব হয়। তাছাড়া দুই বেডের মাঝের নালায় কম সময়ে স্বল্প পরিমাণ পানি দিয়ে সেচ দেয়া সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস গাছের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছায়। এতে গাছের বাড়-বাড়তি ভাল হয়। রোগবালাই বিশেষত ইঁদুরের উপদ্রব কম হয়। আগাছা দমন সহজ হয়। পানি ও সারের সুষ্ঠু ব্যবহারের ফলে গমের (বারি গম-২৬ জাতের) গাছ প্রতি গমের কুশি বেশি হয় এবং প্রতি কুশিতে বীজের সংখ্যা বেশি হয়। বীজ পুষ্ট হয়, বীজের ওজন অধিক হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে একক জমি প্রতি বীজের ফলন অধিক হয়। বীজের আকার বড় হওয়ার কারণে বীজের মান তথা বীজ গজানোর হার বেশি হয়ে থাকে। ফলে কৃষকের বীজ হার কম লাগে। এবং বীজের উৎপাদন খরচ কমে যায়।
গম বীজ বোনার পূর্বে একটি ড্রাম অথবা বিস্কুটের টিনে ৫ কিলোগ্রাম গম বীজের সাথে ১২.৫ গ্রাম ভিটাভেক্স (প্রতি কেজিতে ২.৫ গ্রাম) নিয়ে টিনটি পাঁচবার ওপর নিচ করে ঝাকালে বীজের সাথে ভিটাভেক্স -২০০ ভালোভাবে মিশে যায়। গমের বীজ (জাত-সুফী) ২০ নভেম্বর বপন করলে বীজের ফলন অধিক (৩.৩৩ টন/হে.) হয়ে থাকে। সুফী জাতের গম বিজয় ও প্রদীপ জাতের চেয়ে আগাম পরিপক্ব হয়ে থাকে। ডিসেম্বর মাসের ৫ ও ২০ তারিখে বপনের তুলনায় ২০ নভেম্বর বপন করলে গমের ফলন বৃদ্ধির হার অধিক হয়ে থাকে। ২০ নভেম্বরে বপনকৃত গাছ থেকে সংগৃহীত বীজ টিনের পাত্রে রাখলে গজানো হার বেশি (প্রায় ৯৭%) হয়ে থাকে।
মুগবীজ উৎপাদন : বপন মৌসুম ও সময় নির্ধারণ, ন্যাপথালিন এসেটিক এসিড প্রয়োগ এবং পড উত্তোলনের সঠিক সময় নির্ধারণের মাধ্যমে গুণগতমান সম্পন্ন মুগবীজ উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় মুগ খরিফ-১ (মার্চ-মে) ও খরিফ-২ (আগস্ট-নভেম্বর) মৌসুমে চাষ করা যায়। ভাল মানের বীজ পেতে খরিফ-১ মৌসুমে মুগবিন চাষ করা উত্তম। তবে খরিফ-২ মৌসুমে অর্থ্যাৎ আগস্ট মাসে বপনকৃত মুগবিন থেকেও উন্নত মানের বীজ পাওয়া যায়। মুগবিন একটি ইনডিটারমিনেট টাইপ (ওহফবঃবৎসরহধঃব ঃুঢ়ব) ফসল। সে কারণে মানসম্পন্ন বীজ পেতে হলে প্রথমবারের সংগ্রহকৃত পড থেকে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তীতে উত্তোলিত পড থেকে প্রাপ্ত বীজের গজানোর ক্ষমতা এবং বীজের সতেজতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। মুগের ফুল আসার পূর্বে (বপনের ৩০ দিনের সময়) ৩০ পিপিএম মাত্রায় ন্যাপথালিন এসেটিক এসিড গাছে একবার প্রয়োগ করলে একক জমি প্রতি বীজের উৎপাদন অধিক হয়ে থাকে।
ফেলন বীজ উৎপাদন : ভাল বীজ উৎপাদনের জন্য নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি হতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বপনকৃত ফসল থেকে বীজ সংগ্রহ করা দরকার। ফসল পরিপক্ব হলে প্রথমবারের (ঋরৎংঃ ভষধংয) গুটি থেকে সংগ্রহকৃত বীজই উত্তম। অতি বৃষ্টিতে বীজের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যদি প্রথম ফসল তোলার সময় বৃষ্টি হয় তবে দ্বিতীয় বারের তোলা ফসল হতে বীজ রাখতে হবে।
ঝাড়শিমের বীজ উৎপাদন : সমন্বিত সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ানো যায়; মাটির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ এবং মাটিস্থ উপকারী জীবাণুর কর্মক্ষমতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যায়। ২৫-৩০ সেমি দূরত্বের সারিতে ১০-১৫ সেমি. দূরে দূরে বীজ লাগাতে হয়। আমাদের দেশে নভেম্বর মাস বীজ বপনের জন্য সবচেযে উত্তম সময়। তবে সুনিষ্কাশিত জমি হলে অক্টোবর মাসে রোপণ করতে পারলে আগাম শিমের দাম ভাল পাওয়া যায়। ইউরিয়া ১৫০-১৬০ কেজি; টিএসপি ১৫০-১৬০ কেজি; এমওপি ৯০-১০০ কেজি; জিপসাম ৮-২০ কেজি; বোরন ৬-৮ কেজি; যে কোন একটি জৈব সার ৩.০ টন বায়োচার বা ৩ টন ট্টাইকোকম্পোস্ট বা ৩.০ টন ভার্মিকম্পোস্ট বা ৫.০ টন পোল্ট্রি বিষ্ঠা। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, এমপি ও অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। বাকি ইউরিয়া ১৫ দিন ও ৩০ দিন পর ২ বার উপরিপ্রয়োগ করা হয়। ঝাড় শিম বীজ পরিপক্ব হতে প্রায়  ১৩০-১৪০ দিন সময় দরকার হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ঝাড়শিমের হেক্টর প্রতি ফলন ১.০-১.৫ মেট্রিকটন পাওয়া যায়।
সয়াবিন বীজ উৎপাদন : জিবেরেলিক এসিড এর প্রয়োগের মাধ্যমে সয়াবিনের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা যায়। প¬ান্ট গ্রোথ রেগুলেটর (উদ্ভিদ বর্ধক হরমোন) গাছের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক। জিবেরেলিক এসিড গাছের কা-, ফুল এবং মুকুলের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পড গঠনের সময় জিবেরেলিক এসিড এর মাত্রা ১০০ পিপিএম (প্রতি লিটার পানিতে ১০০ মিলি গ্রাম) হারে স্প্রে করলে সয়াবিনের ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে            ১৫-২০% বেশি হয়। হেক্টর প্রতি বীজের ফলন ১.৭-২.০ মে. টন হয়ে থাকে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সয়াবিনের বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা শতকরা ৮৫ ভাগের বেশি হয়। কৃষকের ফলন শতকরা ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
বীজ সংরক্ষণ
বীজ পরিপক্ব হওয়ার পর শুকনা দিনে ফসল কাটতে হবে। ফসল কাটার পর দ্রুত বীজ মাড়াই করে রোদে শুকিয়ে এবং ঝেঁড়ে নিতে হবে। বীজ রোদে দিয়ে এমনভাবে শুকাতে হবে যেন বীজের আর্দ্রতা প্রায় শতকরা ৮-৯ ভাগের কাছাকাছি থাকে। শুকানোর পর বীজ ঠা-া করে বায়ুরোধী পাত্র যেমন টিনের পাত্র, প¬াস্টিক ড্রাম এবং মোটা পলিথিনসহ চটের ব্যাগে কক্ষ তাপমাত্রায় (২৬-৩২ ডিগ্রি সে.) ঘরের মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ তুলনামূলক ভাবে ঠা-া এবং শুষ্ক ঘরে রাখা উত্তম। এভাবে সংরক্ষণ করলে পরবর্তী মৌসুম পর্যন্ত বীজের গুনগত মান অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব। মাঝে মাঝে শুষ্ক এবং রৌদ্রোজ্জল দিনে বীজ শুকানো যেতে পারে।
সংরক্ষণকালে বালাই দমনের ক্ষেত্রে বীজ মাটির মটকাতে বা টিনের পাত্রে শুকনো নিমপাতাসহ বা ছাই মিশিয়ে ঘরের মাচায় সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি ২০ কেজি বীজের জন্যে ৬-৭ মুঠি শুকনো নিম পাতা বা ছাই তিন স্তর (তলায়, মাঝে এবং উপরে) মিশাতে হবে। তবে উপরের স্তর বেশি পুরু হবে। এভাবে বীজ সংরক্ষণ করলে বীজের অংঙ্কুরোদগম ক্ষমতা সন্তোষজনক থাকে।
কিন্তু চীনাবাদামের ক্ষেত্রে  আর্দ্র আবহাওয়ায় ২৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় চীনাবাদাম বীজের মাটির অভ্যন্তরেই অংঙ্কুরোদগম ঘটে। বাংলাদেশে এটি একটি বড় সমস্যা। ভাল বা গুনগত মানের বীজ পেতে হলে ফসল যথা সময়ে কাটতে এবং সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। চীনাবাদাম বীজ বায়ু নিরোধক পাত্রে যেমন পলিথিনযুক্ত চটের বস্তা বা দুই স্তর বিশিষ্ট পলিথিন বস্তায় ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করে বীজ সংরক্ষণ করে বীজের জীবন কাল প্রলম্বিত করা যায়। ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে একটি ছিদ্রযুক্ত ঢাকনাওয়ালা কৌটায় রাখতে হবে। তারপর বস্তায় (৪০ কেজি বস্তায়) প্রথমে অর্ধেক অংশ বাদাম বীজ দিয়ে ভরতে হবে। এই পর্যায়ে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড কৌটাটি খাড়া করে স্থাপন করতে হবে। অতঃপর বস্তার বাকী অংশ বীজ দিয়ে ভর্তি করে মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও ঠা-া ঘর (কুলরুম) যেখানে তাপমাত্রা ১৮-২০ ডিগ্রি সে. এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪০-৪৫% থাকে সেখানে ১ বৎসর থেকে ২ বৎসর পর্যন্ত শুকানো বীজ (৮-১০% বীজের আর্দ্রতা) সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়। ডিপ ফ্রিজ বা অধিক ঠা-া ঘর যেখানে তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সে. এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৩০% এর নীচে থাকে সেখানে শুকানো বীজ (৭-৮% বীজের আর্দ্রতা) ৩-৫ বৎসর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ভবিষ্যৎ করণীয় : বীজের কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা, ভৌত ও শারীরতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা এবং বীজের স্বাস্থ্য নিয়ে মৌলিক গবেষণা করা প্রয়োজন। উৎপাদনের প্রথম শর্তই হলো বীজের কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখা। এজন্য জীব প্রযুক্তি বিষয়ক প্রযুক্তির সাহায্যে বীজের কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা সংক্রান্ত গবেষণা প্রয়োজন। শারীরতাত্ত্বিক বিশুদ্ধতার উন্নয়নের জন্য মলিকুলার পর্যায়ে গবেষণা প্রয়োজন। শারীরতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে বীজের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নের জন্য দায়ী কারনসমূহ উদঘাটনে গবেষণা প্রয়োজন। বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ পর্যায়ে রোগবালাই ও পোকামাকড় এর আক্রমণ ও প্রতিকার নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। জলবায়ূ প্রতিকূলতা সহনশীল বীজ উৎপাদন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা সময়ের দাবি। ৪র্থ শিল্প বিপ¬বের প্রেক্ষাপটে বীজ গবেষণা ক্ষেত্রে ওড়ঞ, অও, অঁঃড়সধঃরড়হ, জড়নড়ঃরপং এবং চৎবপরংরড়হ অমৎরপঁষঃঁৎব এর উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বীজকে ফর্টিফাইড করার মাধ্যমে পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন সমৃদ্ধ বীজ উৎপাদনে গবেষণা প্রয়োজন। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বীজের কাঙ্খিত মান উন্নয়নের জন্য জিনোম লেবেলে গবেষণা করা যুগের দাবী। এই প্রযুক্তি সময় সাশ্রয়ী। জিএমও শস্য এখন বাস্তবতা এবং আমরা সবাই জিএমও সয়াবিন ব্যবহার করছি। তাছাড়াও বীজের বাণিজ্যিকীকরণ এখন বাস্তবতা এবং বীজ ব্যবসা প্রতিযোগীতাপূর্ণ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ পর্যায়ে মাননিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।
লেখক : ১মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ২প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৩ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বীজ প্রযুক্তি বিভাগ, বিএআরআই, গাজীপুর। মোবাইল : ০১৭১৪৫৫২৫২১, ই-মেইল : নবষধষ.নধৎর@মসধরষ.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon